Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সম্ভাবনাময় ভুট্টার তেল

সম্ভাবনাময় ভুট্টার তেল

কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
বাংলাদেশে ভুট্টা নতুন সম্ভাবনাময় ফসল। বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু ভুট্টা চাষের অনুক‚ল। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত জমিতেও ভুট্টার ভালো ফলন হচ্ছে।   কৃষকদের কাছেও ভুট্টা চাষ জনপ্রিয়তা লাভ করছে। ফলে ভুট্টার উৎপাদন ক্রমশ বাড়ছে। ভুট্টার ক্রমবর্ধমান সম্প্রসারণ একটি পরিসংখ্যান থেকে সহজেই বোঝা যায়।  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০০২-০৩ সালে এ দেশে মোট ভুট্টার উৎপাদন ছিল মাত্র ১৭৫ লাখ টন। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে ভুট্টার মোট আবাদি জমি ও উৎপাদনের পরিমাণ ১৭৪ লাখ হেক্টর এবং ১১৩৭ লাখ মেট্রিক টন ছিলো। যা বেড়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে যথাক্রমে ৫৫৪৪ লাখ হেক্টর জমিতে ৫৪০২৫ লাখ মেট্রিক টন এ দাঁড়িয়েছে এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭৭৫৪৭ লক্ষ হেক্টর জমিতে ৫৬৯২৯ লক্ষ মেট্রিক টন (সূত্র : ডিএই ওয়েবসাইট)।
উন্নত দেশে ভুট্টার বহুমুখী ব্যবহার থাকলেও দেশে শুধু প্রাণি, পোল্ট্রি ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহƒত হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত ভুট্টার অধিকাংশই (৯৫%) প্রাণি, হাঁস-মুরগির ফিড ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহƒত হয়। তবে, ইদানীং খই ভুট্টা, মিষ্টিভুট্টা (৫%) হিসেবেও মানুষের খাদ্য হিসেবে বেশ গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। উন্নত বিশ্বে ভুট্টা থেকে স্টার্চ, ইথানল, জৈব জ্বালানি, তেল উৎপাদনসহ রয়েছে আরো বহুমুখী ব্যবহার। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৫২টি দেশে ভুট্টা থেকে উৎকৃষ্ট মানের ভোজ্যতেল উৎপাদিত ও ব্যবহƒত হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশের টাংগাইল জেলায় স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান ভুট্টার তেল উৎপাদনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
ভুট্টার তেল বা (ঈড়ৎহ ঙরষ )
ভুট্টার দানা থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় উন্নত নিষ্কাশন যন্ত্রে রিফাইনিং করে হালকা হলুদ বর্ণের ভুট্টার তেল সংগ্রহ করা হয়।
ভুট্টার দানা থেকে তেল নিষ্কাশন করার প্রক্রিয়া
সর্বপ্রথম ১৮৯৮-৯৯ সালে ইবহলধসরহ ঐঁফহঁঃ ধহফ ঞযবড়ফড়ৎব ঐঁফহঁঃ নামে দুইজন বিজ্ঞানী বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদনের জন্য ভুট্টার তেল নিষ্কাশন যন্ত্র উদ্ভাবন করেন এবং সে বছরই প্রথম   বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হয়।
মোচা থেকে দানা আলাদা করার পর সাধারণত ০৩ টি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দানা থেকে তেল নিষ্কাশন করা হয়।
১. হেক্সেন নিষ্কাশন (ঐবীধহব বীঃৎধপঃরড়হ) ভুট্টা থেকে তেল নিষ্কাশন করতে হেক্সেন মিশ্রিত দ্র্রবণে দানাগুলোকে ধৌত করা হয়। ফলে হেক্সেনের প্রভাবে দানা থেকে তেল বের হয়।
২. দুর্গন্ধ দূরীকরণ (উবড়ফড়ৎরুধঃরড়হ) প্রক্রিয়া : অনাকাক্সিক্ষত গন্ধ ও স্বাদ ভুট্টার তেল থেকে দূর করার জন্য কিছু স্বাস্থ্যকর উপাদান মিশ্রিত করা হয়।
৩. শীতলীকরণ (ডরহঃবৎরুধঃরড়হ) প্রক্রিয়া : মোম এবং দানা জাতীয় সম্পৃক্ত ফ্যাট (ডধীবং ধহফ ংধঃঁৎধঃবফ ংড়ষরফ ভধঃং) দূর করার জন্য রিহঃবৎরুধঃরড়হ করা হয়, যাতে নিম্ন তাপমাত্রাতেও এই তেল তরল থাকে কোনোরূপ জমাট বাধতে যেন না পারে।
এই তিনটি ধাপ সম্পন্ন করে প্যাকেট বা বোতল জাত করা হয় ঈড়ৎহ ঙরষ বা ভুট্টা তেল।
ভুট্টার তেলের পুষ্টিগুণ
মোট চর্বি (লিপিড) ১৩.৬ গ্রাম (৩৮.৮৬%), ভিটামিন ই (আলফা টকোফেরল) ১৯.৪ মিগ্রাম ( ১২.৯৩%), ভিটামিন কে (ফাইলোকুইনোন) ০.৩ মাইক্রোগ্রাম (০.২৫%)। ০১ চা চামচ (১৩৬ গ্রাম) ভুট্টার তেলে ক্যালরি আছে ১২২ কিলোক্যালরি। বিজ্ঞানী মার্ক ২০১৫ সালে তার গবেষণায় দেখিয়েছেন, ভুট্টার তেলে ফ্যাটি এসিড বিদ্যমান আছে। যেমন: মাইরিস্টিক এসিড ০.১-১.৭%, পালমিটিক এসিড    ৮-১২%, স্টিয়ারিক এসিড-২.৫-৪.৫%, হেক্সাডেসোনিক এসিড           ০.২-১.৬%, ওলিক এসিড ১.৯-৪.৯% এবং লিনোলেয়িক এসিড ৩.৪-৬.২% আছে।
ভুট্টার তেলের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
ভুট্টার তেলে কোনো আমিষ বা শর্করা নেই, শতকরা ১০০ ভাগই চর্বি আছে। যার পুষ্টিমান অন্যান্য তেলের চেয়ে বেশি। ভুট্টা তেলের সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড ও অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলের সমপরিমাণ। ভুট্টা তেলে ভিটামিন ই (টোকোফেরল) এর পরিমাণ সূর্যমুখী তেলের চেয়ে বেশি। বিশেষ করে ভুট্টা তেলে ভিটামিন কে (১.৯ মাইক্রো গ্রাম) রয়েছে যেখানে সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলে তা অনুপস্থিত। এছাড়াও যেহেতু ভুট্টার তেলে দুই ধরনের অস্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড (গড়হড়ঁহংধঃঁৎধঃবফ ভধঃঃু ধপরফং ধহফ ঢ়ড়ষুঁহংধঃঁৎধঃবফ ভধঃঃু ধপরফং) থাকে, যা হার্টজনিত অসুখের ঝুঁকি কমায়।
এছাড়াও ভুট্টার তেলে ফাইটোস্টেরল (ঢ়যুঃড়ংঃবৎড়ষ) উপাদান থাকে, যা কোলেস্টেরলের কম শোষণে (ধনংড়ৎন) সাহায্য করে।
ভুট্টার তেলে ৫৫% পলি-অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড ও ৩০% মনো-অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড থাকে। উচ্চ মাত্রার পলি-অস্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড থাকায় তা হাইপারটেনশনজনিত রোগীদের রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে করে। গবেষণা বলছে, ভুট্টার তেল রক্ত চাপ (নষড়ড়ফ ঢ়ৎবংংঁৎব) ১০ কমিয়ে আনে। এইটা খউখ (ইধফ  পযড়ষবংঃবৎড়ষ)  মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ভুট্টার তেলে  ভিটামিন ই ও লিনোলিয়িক এসিড (ষরহড়ষবরপ ধপরফ) থাকায় এই তেল ম্যাসেজ ওয়েল (সবংংধমব ড়রষ) হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ৫৯% (ষরহড়ষবরপ ধপরফ) থাকায় এ তেল খুব সহজেই ত্বক কোষে প্রবেশ করে। ভিটামিন-ই ধহঃর-রহভষধসসধঃড়ৎু ধহঃরড়ীরফধহঃ  হিসেবে কাজ করে।
সপ্তাহে ১-২ বার ভুট্টার তেল চুলে ব্যবহার করলে চুল উজ্জ¦ল, মজবুত ও শক্ত হয়, এমনকি খুশকি দূর করতেও সাহায্য করে।
এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন পশু পাখির চিকিৎসায় ভুট্টার তেল ব্যবহার করা যায়।
ভুট্টার তেলের ব্যবহার
মার্জারিন (সধৎমধৎরহব) এর একটি উপাদান হিসেবে এই তেল ব্যবহার করা হয়। বেশি ফ্রাই যুক্ত রেসিপি যেমন- ফ্রেন্স ফ্রাই (ঋৎবহপয ভৎরবং) তৈরিতে এই তেল ব্যবহার করা হয়। বিস্কুট, চানাচুর, কেক, মাখন, বেকিং পাউডার বা পাউরুটি  তৈরিতে ভুট্টার তেল ব্যবহার করা হয়। সালাদ ও ম্যাইনোজ (ংধষধফ ধহফ সধুড়হহধরংব) তৈরিতেও ভুট্টার তেল ব্যবহƒত হচ্ছে। কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। লোহা জাতীয় পদার্থের ক্ষয়রোধে এই তেল ব্যবহার করা হয়। নাইট্রোগিøসারিন তৈরিতে, সাবান, স্যাম্পু, লুব্রিক্যান্ট, গ্যাসোনিল শিল্পে ভুট্টার তেল ব্যবহার করা হয়। সাবান, কালি, পেইন্ট, ইরেজার তৈরিতেও ভুট্টার তেল ব্যবহƒত হয়। বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালস প্রোডাক্ট উৎপাদনেও ভুট্টার তেল ব্যবহার করা হয়। এমনকি বায়োডিজেল উৎপাদন প্রযুক্তিতেও এই তেল ব্যবহƒত হয়।
ভুট্টার তেল ব্যবহারে সতর্কতা
ভুট্টার তেলে উচ্চ মাত্রার লিনোলেয়িক এসিড (ষরহড়ষবরপ ধপরফ) আছে, সেই তুলনায় খুব কম পরিমাণে ওমেগা-৩ উপাদান আছে। গবেষণা বলে, উচ্চ মাত্রার ওমেগা-৬ ও কম মাত্রার ওমেগা-৩ শরীরে বিভিন্ন রকম প্রদাহ (রহভষধসসধঃরড়হ) যেমন- ব্রণ (ধপহব), হাড়ে ব্যাথা (ধৎঃযৎরঃরং) সৃষ্টি করতে পারে। স্বাভাবিক সুস্থ মানব শরীরে ওমেগা-৬ ও ওমেগা-৩ এর অনুপাত থাকা উচিত ৪ঃ১, সেখানে ভুট্টার তেলে আছে ৪৬ঃ১। অতিরিক্ত পরিমাণ ভুট্টার তেল সেবন করলে পরিপাকতন্ত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রার ভুট্টার তেল লিভার ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী হতে পারে। যেসমস্ত মহিলাদের মাসিকজনিত (ঢ়ড়ংঃসবহড়ঢ়ধঁংধষ) সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই তেল সমস্যা হতে পারে।  উচ্চ মাত্রার ভুট্টার তেল সেবন মহিলাদের স্তন ক্যান্সার (নৎবধংঃ পধহপবৎ) এর সম্ভবনাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। ভুট্টার তেল উচ্চমাত্রায় রিফাইনিং করে উৎপাদন করা হয় তাই অনেক সময় অধিক তাপে ক্ষতিকর অ্যাক্রিলামাইড (ধপৎুষধসরফব) উৎপাদিত হতে পারে, তাই সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। ৪৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ২৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পড়ৎহ ড়রষ সাধারণত নঁৎহ হয় (ংসড়শরহম ঢ়ড়রহঃ) তাই বিষয়টাও ভোক্তা পর্যায়ে ব্যবহারের আগে গবেষকদের ভাবনায় রয়েছে।
পরিশেষে বলতে চাই, দেশে বর্তমানে উৎপাদিত ৫৪ লাখ টন ভুট্টা থেকে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টন ভুট্টাতেল প্রতি বছর আহরণ করা সম্ভব যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। তাই ভূট্টার তেলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দূরীভূত করে সুন্দর হায়াজেনিক (যুমরবহরপ) প্রক্রিয়ায় তেল উৎপাদন করতে পারলে তা আমাদের দেশের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনবে এবং বিশাল তেলের ঘাটতি থেকে আমাদের মুক্তি দিবে।


কৃৃষি সম্প্রসারণ অফিসার, বাঘা, রাজশাহী, মোবাইল : ০১৭৬৭০০৭২৮০, ই-মেইল : kamrulgepb13@gmail.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon